ঢাকা , বুধবার, ০২ এপ্রিল ২০২৫ , ১৮ চৈত্র ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

​সৌদির সঙ্গে মিল রেখে দেশের বিভিন্ন স্থানে ঈদ উদযাপন

ডেস্ক রিপোর্ট
আপলোড সময় : ৩০-০৩-২০২৫ ০৩:২৯:৪৪ অপরাহ্ন
আপডেট সময় : ৩০-০৩-২০২৫ ০৩:২৯:৪৪ অপরাহ্ন
​সৌদির সঙ্গে মিল রেখে দেশের বিভিন্ন স্থানে ঈদ উদযাপন ​সংবাদচিত্র : ফোকাস বাংলা নিউজ
সৌদি আরবের সঙ্গে মিল রেখে দেশের বিভিন্ন স্থানে ঈদুল ফিতর উদযাপন করছেন। রোববার (৩০ মার্চ) সকালে তারা নামাজ আদায় ও একে অন্যের সঙ্গে কোলাকুলি করে এই আনন্দ উদযাপন শুরু করেন।

লক্ষ্মীপুর
সৌদি আরবের সঙ্গে মিল রেখে লক্ষ্মীপুরে ১০টি গ্রামে ঈদুল ফিতর উদযাপিত হচ্ছে। রোববার (৩০ মার্চ) জেলার রামগঞ্জ উপজেলার নোয়াগাঁও, জয়পুরা, বিঘা, বারো ঘরিয়া, হোটাটিয়া, শরশোই, কাঞ্চনপুর ও রায়পুর উপজেলার কলাকোপাসহ ১০টি গ্রামের সহস্রাধিক মুসল্লি ঈদুল ফিতর উদযাপন করছেন।

সকাল সাড়ে সাতটায়  রামগঞ্জ উপজেলার খানকায়ে মাদানিয়া কাসেমিয়া মাদ্রাসায় প্রধান জামাত অনুষ্ঠিত হয়। এতে ইমামতি করেন মাওলানা মোহাম্মদ রুহুল আমিন। এছাড়া ও এসব গ্রামের সহস্রাধিক মুসল্লি আলাদাভাবে নিজ নিজ ঈদগাহ মাঠে ঈদের নামাজ আদায় করেন।

মাওলানা ইসহাক (রাঃ) অনুসারী হিসেবে এসব এলাকার মানুষ পবিত্র ভূমি মক্কা ও মদিনার সঙ্গে সঙ্গতি রেখে ঈদসহ সব ধর্মীয় উৎসব উদযাপন করেন বলে স্থানীয়রা জানিয়েছেন। তারা জানান, এসব গ্রামের মুসল্লিরা গত ৪৫ বছর যাবত সৌদি আরবের সঙ্গে মিল রেখে ঈদ উদযাপন করে আসছেন।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ 
চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর ও শিবগঞ্জ উপজেলার পাঁচ গ্রামের প্রায় চার শতাধিক মুসুল্লি আজ ঈদুল ফিতর উদযাপন করেছে। জেলার সদর উপজেলার দেবীনগর ইউনিয়নের মোমিন টোল ও বাগানপাড়া এলাকায়, সুন্দরপুর ইউনিয়নের ছোট মরা পাগলা জামে মসজিদে ও শিবগঞ্জ উপজেলার বিনোদপুর ইউনিয়নের রাধানগর ও ছিয়াত্তর বিঘি এলাকার চার শতাধিক পরিবারের সদস্যরা এ ঈদ পালন করেন। 

চাঁপাইনবাবগঞ্জের সদর উপজেলার সুন্দরপুর ইউনিয়নের ছোট মরা পাগলা জামে মসজিদে প্রায় ১৫ জন নারী-পুরুষ ঈদের নামাজ আদায় করেন। এখানে ইমামতি করেন মোওলানা মো. এলাম উদ্দিন।

এছাড়াও একই উপজেলার আট নম্বর দেবীনগর ইউনিয়নের মোমিনটোলা গ্রামের একটি আম বাগানে সকাল সোয়া আটটায় প্রায় দেড় শতাধিক নারী-পুরুষ ঈদুল ফিতরের নামাজ অনুষ্ঠিত হয়। এখানে ইমামতি করেন মওলানা মো. আবুল কালাম আজাদ।

অন্যদিকে শিবগঞ্জ উপজেলার বিনোদপুর ইউনিয়নের রাধানগর ও ছিয়াত্তর বিঘি গ্রামের দুই শতাধিক নারী পুরুষ মুসুল্লি বায়তুল হামদ জামে মসজিদ প্রাঙ্গণের মাঠে ঈদ উদযাপন করেছেন। এতে ইমামতি করেন মাওলানা শাইখ মোজাম্মেল হক।

সোনারগাঁ
নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ে ২৩ গ্রামে ঈদ উদযাপন করছেন প্রায় তিন হাজার মানুষ। রোববার সকালে ঈদুল ফিতরের নামাজ আদায়ের মধ্যে দিয়ে ঈদের আনুষ্ঠানিকতা শুরু করে তারা। 

এদিন সকাল আটটায় উপজেলার গিরদাইন, নয়াপুর, গনকবাড়ী, কোনাবাড়ী, কলতাপাড়া সহ ২৩টি গ্রামে ঈদ উদযাপন করা হয়। 

উপজেলার গিরদাইন এলাকার জামে মসজিদে সকাল আটটায় ঈদুল ফিতরের নামাজ অনুষ্ঠিত হয়। এছাড়া সকাল সাড়ে আটটায় নয়াপুর, উপজেলার নয়াপুর, গনকবাড়ী, গজারিয়া পাড়া, কোনাবাড়া এলাকায় ঈদের নামাজ অনুষ্ঠিত হয়।

উপজেলার বাংলা বাজার এলাকার ‎গিরদাইন গ্রামের পনির খন্দকার বলেন, আমরা প্রতি বছর সৌদি আরবের সঙ্গে মিল রেখে আগাম রোজা রাখাসহ ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আজহা উদযাপন করে থাকেন। 

‎উপজেলার নয়াপুর গ্রামের জামে মসজিদে ঈদুল ফিতরের নামাজে ইমামতি করেন মাওলানা কামরুজ্জামান। তিনি বলেন, আমরা ২০ পরিবার প্রতি বছর সৌদি আরবের সঙ্গে মিল রেখে রোজা ও ঈদুল ফিতর এবং ঈদুল আজহা উদযাপন করে আসছি। এরই ধারাবাহিকতায় আজ আমরা ঈদুল ফিতর উদযাপন করছি।

চাঁদপুর
সৌদি আরবসহ মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর সঙ্গে মিল রেখে চাঁদপুরের হাজীগঞ্জ উপজেলার সাদ্রা দরবার শরীফ এবং জেলার প্রায় অর্ধশত গ্রামে আজ পবিত্র ঈদুল ফিতর উদযাপন হচ্ছে।

শনিবার (২৯ মার্চ) রাতে আরব দেশসমূহে ঈদুল ফিতর উদযাপনের ঘোষণা হলে চাঁদপুরের এসব গ্রামের ঈদের জামায়াতের সময় সূচি নির্ধারণ করা হয়।

রোববার ঈদের প্রথম জামায়াত অনুষ্ঠিত হয় সাদ্রা দরবার শরীফ মাঠে সকাল ৯টায়। এই জামায়াতে ইমামতি করেন পীরজাদা মাওলানা মুফতি জাকারিয়া চৌধুরী।

এরপর দ্বিতীয় ঈদ জামায়াত অনুষ্ঠিত হয় সাদ্রা হামিদিয়া ফাজিল (ডিগ্রি) মাদ্রাসা মাঠে সকাল সাড়ে ৯টায়। এতে ইমামতি করেন মাওলানা মুফতি আরিফ চৌধুরী।

দরবার শরীফের দুটি ঈদ জামায়াতে আশপাশের গ্রামের লোকজন অংশগ্রহণ করেন। নামাজ শেষে বিশ্ব মুসলিম উম্মাহ, দেশের শান্তি ও সমৃদ্ধি কামনা করে দোয়া করা হয়।

এছাড়াও সকাল ৯টায় ঈদের বড় জামায়াত অনুষ্ঠিত হয় মুন্সিরহাট বাজার জামে মসজিদে এবং আশাপাশের গ্রামে। এসব জামায়াতগুলোতে দরবারের অনুসারী মুসল্লি অংশগ্রহণ করেন।

দরবার শরীফের পীরজাদা মাওলানা মুফতি আরিফ চৌধুরী বলেন, শুধুমাত্র সৌদি আরব নয়, কোরআন ও হাদিসের আলোকে চাঁদ দেখার ওপর নির্ভর করে আমরা রোজা পালন ও ঈদুল ফিতর উদযাপন করে থাকি।

দরবার শরীফের পীরজাদা পীর ড. বাকীবিল্লাহ মিশকাত চৌধুরী বলেন, আগাম রোজা ও দুই ঈদ পালনের প্রবর্তক মাওলানা ইসহাক (রহ.)। ১৯২৮ সাল থেকে সাদ্রা দরবার শরীফের পীর সৌদি আরবসহ অন্য আরব দেশগুলোর সঙ্গে মিল রেখে রোজা, ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আজহা উদযাপনের প্রথা চালু করেন।

এছাড়াও মরহুম পীর মাওলানা ইসহাক (রহ.) এর অনুসারী মুসল্লীরা চাঁদপুরসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় একই সাথে ঈদুল ফিতর উদযাপন করছেন।

রাঙ্গাবালী
পটুয়াখালীর রাঙ্গাবালী উপজেলার ৯ গ্রামে আজ ঈদুল ফিতর উদযাপন করা হচ্ছে। রোববার সকাল আটটা থেকে ৯টার মধ্যে ওইসব গ্রামে  ঈদের নামাজ আদায় করা হয়। তারা সবাই কাদরিয়া-চিশতিয়া তরিকার চট্টগ্রাম চন্দনাইশ জাগিরিয়া শাহ সুফি মমতাজিয়া দরবার শরীফের অনুসারী। 

কাদরিয়া-চিশতিয়া তরিকার অনুসারী রাঙ্গাবালী জাগিরিয়া শাহ সুফি মমতাজিয়া সুন্নিয়া দাখিল মাদ্রাসার সুপার (ভারপ্রাপ্ত) আনোয়ার হোসেন শাহিন জানান, উপজেলার রাঙ্গাবালী ইউনিয়নের পশুরবুনিয়া, উত্তর পশুরবুনিয়া,  নিজ হাওলা, সেনের হাওলা, চর যমুনা, ছোটবাইশদিয়া ইউনিয়নের ফুলখালী ও কোড়ালিয়াসহ ৯ গ্রামে ঈদ উদযাপিত হচ্ছে।

বগুড়া
বগুড়ার তিন উপজেলার তিন মাঠে সৌদি আরব ও মধ্যপ্রাচ্যের সঙ্গে মিল রেখে উদযাপিত হয়েছে পবিত্র ঈদুল ফিতরের নামাজ। 

জেলার গাবতলী উপজেলার রেল স্টেশনের একটি মাঠে অর্ধশত মুসল্লি সকাল আটটায় ঈদের নামাজ আদায় করেন। সেখানে নারীরাও অংশগ্রহণ করেন। এছাড়াও ধুনট উপজেলার হাশুখালী গ্রামে ও সোনাতলার কালাইগাটা গ্রামে কয়েকবাড়ির মুসল্লিরা সকাল সাড়ে সাতটায় ঈদের নামাজ আদায় করেছেন। 

গাজীপুর
গাজীপুরের দুটি স্থানে উদযাপিত হচ্ছে পবিত্র ঈদুল ফিতর। রোববার (৩০ মার্চ) সকালে সদর উপজেলার মির্জাপুর ইউনিয়নের ডগরী মসজিদে মুসল্লিরা জামাতে ঈদের নামাজ আদায় করেন। নামাজ শেষে মসজিদেই মিষ্টি খেয়েছেন তারা। 

এছাড়া কালীগঞ্জের মোক্তারপুর ইউনিয়নে ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয়। নামাজ শেষে একে অপরের সঙ্গে কোলাকুলি করেন।

তারা বলেন, পৃথিবীর অনেক দেশে ঈদ হচ্ছে, সে হিসেবে আমরাও পালন করছি। সৌদির সঙ্গে মিল রেখে নয়, চাঁদ দেখে ঈদ করছি। 

‎পটুয়াখালী 
পটুয়াখালীতে বিভিন্ন স্থানে সৌদি আরবের সঙ্গে মিল রেখে জেলার ৩০ গ্রামের অর্ধলক্ষাধিক মানুষ ঈদুল ফিতর উদযাপন করছেন। 

সদর উপজেলার বদরপুর দরবার শরীফ এলাকার কিছু সংখ্যক পরিবার ঈদুল ফিতর উদযাপন করেছে। 

সকাল ৯ টায় বদরপুর দরবার শরিফে পবিত্র ঈদুল ফিতরের নামাজের জামাত অনুষ্ঠিত হয়া। এতে ইমামতি করেন বদরপুর দরবার শরীফ সেজ পীর সাহেব মাওলানা আরিফ বিল্লাহ রাব্বানী। 

তিনি বলেন, ১০০ বছর আগে থেকে সৌদি আরব সঙ্গে মিল রেখে একদিন আগে থেকে রোজা এবং ঈদ উদযাপন করছেন। এলাকায় এরা হানাফি ও মাজহারের অনুশারী হিসেবে পরিচিত এবং তারা চট্টগ্রামের এলাহাবাদ, বদরপুর ও কানটুপি অনুশারী। 

কলাপাড়া
পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলার ১০টি গ্রামের প্রায় পাঁচ পরিবার আজ আগাম  ঈদ উদযাপন করছে। এ উপলক্ষে গ্রামগুলোতে বিরাজ উৎসবের আমেজ। 

এদিন সকাল ৯টায় কলাপাড়ার ধানখালী ইউনিয়নের উত্তর নিশান বাড়িয়া জাহাগিরিয়া শাহ্সূফি মমতাজিয়া দরবার শরীফ মাঠে ঈদুল ফিতরের প্রধান জামাত অনুষ্ঠিত হয়। এছাড়া একই সময়ে আরও সাতটি ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয় বিভিন্ন মসজিদ ও খানকায়।

স্থানীয়দের কাছ এরা সম্প্রদায়ের লোকজন চট্রগ্রামের এলাহাবাদ সুফিয়া ও চানটুপির অনুসারী হিসেবে পরিচিত। 

সাতক্ষীরা
সাতক্ষীরার অন্তত ২০টি গ্রামে ঈদুল ফিতর অনুষ্ঠিত হচ্ছে। সকাল আটটায় সদর উপজেলার ভাড়ুখালি আহলে সুন্না আল জামাত জামে মসজিদে ঈদের  জামাত অনুষ্ঠিত হয়। এতে ইমামতি করেন মাওলানা হাববুর রহমান।

এছাড়া সাতক্ষীরা সদরের বাউখোলা, তালা উপজেলার জেঠুয়া, ইসলামকাঠি, শ্যামনগর উপজেলার গোয়াল চত্বরসহ জেলার বিভিন্ন স্থানে একই সময়ে ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয়।

মাওলানা হাববুর রহমান বলেন, প্রতি বছর সৌদি আরবের সঙ্গে মিল রেখে সাতক্ষীরার বিভিন্ন গ্রামে ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয়। আমরা বিশ্বাস করি, সারা বিশ্বের মুসলমানদের সঙ্গে একদিনে ঈদ করাই উত্তম।

ঈদের জামাতে আসা মুসল্লিরা বলেন, দীর্ঘদিন ধরে এসব গ্রামে সৌদি আরবের সঙ্গে মিল রেখে রোজা ও ঈদ উদযাপন করা হচ্ছে। যদিও বাংলাদেশের সরকারি হিসাব অনুযায়ী ঈদ একদিন পর উদযাপিত হবে। তবে এই ২০টি গ্রামে আগেভাগেই ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করে নেন ধর্মপ্রাণ মুসল্লিরা।

শেরপুর
শেরপুরের সাতটি গ্রামে উদযাপিত হচ্ছে আগাম ঈদুল ফিতর। রোববার (৩০ মার্চ) সকাল সাড়ে আটটা থেকে সাড়ে ১০টার মধ্যে এসব গ্রামে ঈদুল ফিতরের জামাত অনুষ্ঠিত হয়।

গ্রামগুলো হলো- সদরের উত্তর চরখারচর ও দক্ষিণ চরখারচর, বামনেরচর; নালিতাবাড়ী উপজেলার নন্নী পশ্চিমপাড়া ও গোবিন্দনগর ছয়আনীপাড়া, নকলা উপজেলার চরকৈয়া এবং ঝিনাইগাতী উপজেলার বনগাঁও চতল।

অনুষ্ঠিত প্রতিটি জামায়াতে ২০০থেকে ২৫০ মুসল্লি অংশগ্রহণ করেন। এসব জামাতে পুরুষ মুসুল্লিদের পাশাপাশি নারী মুসল্লিরাও পর্দার ভেতরে নামাজ আদায় করেন। নামাজের পর তারা অংশ নেন প্রীতিভোজে।

স্থানীয়দের তথ্যমতে, গত কয়েক বছর ধরে এসব এলাকার একাংশ নিজেদের সুরেশ্বর দরবার শরিফের ভক্ত বলে দাবি করে সৌদি আরব, আফগানিস্তান ও মধ্যপ্রাচ্যের সাথে মিল রেখে রোজা ও ঈদে নামাজ আদায় করে আসছেন।


বাংলাস্কুপ/ডেস্ক/এসকে
 
 


প্রিন্ট করুন
কমেন্ট বক্স


এ জাতীয় আরো খবর

সর্বশেষ সংবাদ